ঊষার ঐশ্বর্য

প্রতিটি দিবস প্রতিটি জীবন; অধীর মহাকালের প্রতিটি বাজী, সূচনালগ্নে একটি প্রত্যূষ। তখনো মুখ ধোয়নি এঁটো ধরণী, রাতের ঝরে পড়া শুকনো প...

ঊষার ঐশ্বর্য










প্রতিটি দিবস প্রতিটি জীবন;
অধীর মহাকালের প্রতিটি বাজী,
সূচনালগ্নে একটি প্রত্যূষ।
তখনো মুখ ধোয়নি এঁটো ধরণী,
রাতের ঝরে পড়া শুকনো পাতা
রাজপথ জুড়ে একচ্ছত্র আধিপত্য
বিস্তার করতে চায়, তবে
রেষারেষি বেধে যায় চির নবীন বাতাসের সাথে।
জীর্ণ বসনে নারী-পুরুষ নেমে পড়ে
ধুয়ে মুছে সবকিছু নতুন করতে।
ফুল টোকাতে টোকাতে কাঁধে পরিত্যক্ত ঝোলা নিয়ে
নশ্বর বাগিচায় প্রবেশ করে কিশোর-কিশোরীর দল।

জীবিকার নিশান উড়ে
নিভু নিভু প্রায় হলুদ আলোটার নিচে।
অবুঝ প্রাণীগুলো জাগে আড়মোড়া ভেঙে
তাদের রোজকার খাবার খুঁজতে।
মুক্ত নীলাম্বরের সখীরা তা দেখে অবলীলায়
উপহাসে ফেটে পড়ে, যেখানে
সেই সুবহে-সাদেকের অনেক আগেই তারা
নেমে পড়েছে তাদের ছোট্ট বাসাটি ছেড়ে!
সবুজ মহীরূহ ঝাড়ু দিয়ে যখন
প্রকৃতি পরিষ্কার করে দিয়ে যায়,
অর্ধ কুসুম সূর্যটার সম্মুখে তখন
সারা প্রভাতের স্পন্দন ভাসে।

হাতে ফুলের মালা নিয়ে
আরেক ফুল ফোটে এমনি ভোরের মেলায়,
ঠিক তখনি শহরের সবচেয়ে উচু দালানটার
সবচেয়ে উচু ঘরটায়;
নিদ্রিত ফুল ফুটে থাকে
ফুলদানীতে সুবাস নিয়ে।
ঐ দালানগুলোয় কোন সাড়া নেই,
জেগেছে কেবল জীবনের একটি ভাগ,
দিবালোকের দ্বিতীয় প্রহর
এদের তন্দ্রা ভাঙার দিন।
ধীরে আসে আগুন দুপুর,
মাত্রা মেলায় স্নিগ্ধ বিকেল;
নীলিমায় শেষ হয় মেলা;
সময় আসে ঘরে ফেরার।
চেনা সেই তারা ভরা মৌনতা
জমজমাট জ্যোৎস্নার হাটে
মুখরিত চাঁদের রাত।

অন্তরে ভগ্ন কোলাহল;
ঝিমিয়ে পড়ে ব্যস্ততা,
আবারো সেই প্রতীক্ষা ঐশ্বর্যমন্ডিত ঊষার।
সেই আলোকিত আকাশ,
মুক্ত বাতাসে উড়ে চলা সেই ধুলোর মেঘ,
ঝাড়ু হাতে ছিন্ন বসনে সেই বৃদ্ধা,
শুষ্ক সবুজ গালিচায় ফুল তোলা সেই
কিশোর-কিশোরী।
ফুটপাতের ছোট্ট রাজপ্রাসাদে
ফুটফুটে নবজাতকের বিক্ষিপ্ত কান্নার মাঝে
খুঁজে পাওয়া প্রতিদিন একটি নতুন ভোর।



-রচনাকালঃ ২৪ জুন, ২০০৮

0 মন্তব্য: